লেখক:- মো: সোহান হোসেন,বি.ফার্ম ১ম বর্ষ,মানারাত ইন্টার্ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, সাভার, ঢাকা।
বর্তমান বিশ্বে শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রেই বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণজনিত রোগে প্রতি বছর প্রায় ২.৮ মিলিয়নের চেয়েও বেশি লোক মারা যাচ্ছে যাদের কিনা স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সবচেয়ে ভালো বলে বিবেচনা করা হয়। যাইহোক এর প্রধান কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা অ্যান্টিবায়োটিক রেজিসট্যান্সকে দায়ী করেছেন। আর এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে স্বনামধন্য বিজ্ঞানীরা নিরলসভাবে গবেষণা করে যাচ্ছে কিভাবে এ সমস্যা হতে উত্তরণ লাভ করা যায়।কারণ তা না হলে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন পরে যাবে হুমকির মুখে, সংক্রমণের ভয়ে সার্জিকাল অপারেশনও হয়ে পরবে বিরাট ঝুঁকিপূর্ণ।তাই একবিংশ শতাব্দীর স্বাস্থ্য খাতে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স প্রতিরোধ করে বিকল্প পথের সন্ধান করা। আজকে আমি অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের একটি বিকল্প থেরাপি নিয়ে আলোচনা করব। আর এ থেরাপি'টির নাম হলো ফাজ থেরাপি ( Phage therapy)।আমরা জানি -- ভাইরাস অতি-আণবীক্ষণিক এক সত্তা যা শুধুমাত্র প্রোটিন ও নিউক্লিক এসিড দ্বারা গঠিত। একটি ভাইরাস একটি ব্যাকটেরিয়ার তুলনায় প্রায় ১০০ গুণ ছোট। জীবদেহের বাইরে ভাইরাস জড় পদার্থের মতোই নিষ্ক্রিয় থাকে।কিন্তু উপযুক্ত পোষক কোষে প্রবেশ করলে এরা রেপ্লিকেশন (Replication) পদ্ধতিতে অসংখ্য ভাইরাসের প্রতিলিপি সৃষ্টি করে বাইরে বেরিয়ে আসতে পারে।এভাবে একটি ভাইরাস পোষক কোষে নিজের অসংখ্য প্রতিলিপি তৈরি করে থাকে। ভাইরাস পোষক হিসেবে যেসব কোষকে গ্রহণ করে পারে তা হলো উদ্ভিদ, প্রাণী ও ব্যাকটেরিয়া কোষ। সুতরাং ভাইরাস ঐসব কোষকে ধ্বংস করার মাধ্যমে নতুন প্রতিলিপি সৃষ্টি করে। ফাজ থেরাপিতে ( Phage therapy) মূলত ভাইরাস দিয়ে ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করা হয়। এসব ভাইরাসকে ব্যাকটেরিওফাজ (Bacteriophage) বলা হয়। যেমন: T2,T4 এবংT6 ইত্যাদি।
ফাজ থেরাপি কীভাবে কাজ করে?
ব্যাক্টেরিওফাজ সাধারণত ব্যাকটেরিয়াকে লাইসিস করার মাধ্যমে ধ্বংস করে।প্রথমে ফাজ ভাইরাসগুলো ব্যাকটেরিয়ার কোষ প্রাচীরে বিদ্যমান রিসেপ্টরে সংযুক্ত হওয়ার মাধ্যমে শুধুমাত্র নিউক্লিক এসিড অংশটুকু ব্যাকটিরিয়ার ভেতরে প্রবেশ। তারপর
ফাজ ভাইরাস ব্যাকটেরিয়ার ভিতরে রেপ্লিকেশন প্রক্রিয়ায় নিজের অনুলিপি করে। এ প্রক্রিয়ায় প্রতিটি ব্যাকটিরিয়ায় প্রায় 1000 টি পর্যন্ত নতুন ভাইরাস তৈরি করতে পারে।অবশেষে, ভাইরাসগুলি লাইটিক প্রক্রিয়ায় ব্যাকটিরিয়ার প্রাচীর ফেটে বাইরে বেরিয়ে আসে।
ফাজ থেরাপি বনাম অ্যান্টিবায়োটিক:
অ্যান্টিবায়োটিক সেবন ব্যাকটিরিয়া সংক্রমণ রোধের ও প্রতিকারের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি চিকিৎসা।
তবে এগুলি দুটি প্রধান সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে:
১. অ্যান্টিবায়োটিক আমাদের দেহের খারাপ এবং ভাল উভয় ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করতে পারে। আপনার খাদ্য হজম করতে, কিছু পুষ্টি তৈরি করতে এবং আপনাকে সুস্থ রাখতে আমাদের শরীরে কিছু ধরণের ব্যাকটেরিয়া দরকার।ভাল ব্যাকটেরিয়াগুলি আপনার শরীরে অন্যান্য ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাল এবং ছত্রাকের সংক্রমণ বাড়তে বাধা দিতে সহায়তা করে। এ কারণেই অ্যান্টিবায়োটিকের মতো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে:পেট খারাপ, বমি বমি ভাব এবং বমি পেট ব্যথা,পেট ফুলে যাওয়া এবং উদাসীনতা, ডায়রিয়া,দুর্বলতা ইত্যাদি।
২. অ্যান্টিবায়োটিকগুলো "সুপারবার্গস হতে পারে।এর অর্থ হ'ল থামার পরিবর্তে কিছু ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী বা অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসার প্রতিরোধ ক্ষমতা থেকে মুক্ত হয়ে যাওয়া। সেক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিকের কম শক্তিশালী হয়ে উঠলে ব্যাকটিরিয়া বংশবৃদ্ধি করতে পারে।
ফাজ থেরাপির সুবিধাসমূহ:
ফাজ থেরাপির সুবিধাগুলি হলো অ্যান্টিবায়োটিকের ঘাটতিগুলিকে সমাধান করে।অনেক ধরণের ব্যাকটিরিয়া যেমন রয়েছে তেমনি বিভিন্ন ধরণের ব্যাকটিরিওফাজও রয়েছে। তবে একটি নির্দিষ্ট ফাজ কেবল একটি নির্দিষ্ট ব্যাকটিরিয়ায় আক্রমণ করতে পারে। এটি অন্যান্য ধরণের ব্যাকটেরিয়াগুলিকে সংক্রমিত করবে না।এর অর্থ হ'ল ফেজটি সরাসরি রোগজনিত ব্যাকটিরিয়াকে লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহার করা যেতে পারে।
১.এরা পর্যায়ক্রমে উভয়ই চিকিতৎসাযোগ্য এবং অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী ব্যাকটিরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে।
২.এগুলি একা বা অ্যান্টিবায়োটিক এবং অন্যান্য ওষুধের সাথে ব্যবহার করা যেতে পারে।
৩. এরা পর্যায়ক্রমে চিকিৎসার সময় নিজেরা সংখ্যাবৃদ্ধি করে। সুতরাং কেবলমাত্র একটি মাত্র ডোজ প্রয়োজন হতে পারে।
৪.এগুলি কেবলমাত্র দেহের স্বাভাবিক "ভাল" ব্যাকটেরিয়াগুলিকে কিছুটা বির করে।
৫. বংশবৃদ্ধির পর্যায়সমূহ অনুসন্ধান করা সহজ।
৬.এগুলি শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক নয়।
এগুলি প্রাণী, উদ্ভিদ এবং পরিবেশের জন্য বিষাক্ত নয়।
ফাজ থেরাপির অসুবিধাসমূহ:
১.ব্যাকটিরিওফাজগুলো এখনও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় না। এই থেরাপির এটি কতটা ভাল কাজ করে তা জানতে আরও গবেষণা প্রয়োজন।
২.এটি এখনো অজানা যায় যে ফাজ থেরাপি অ্যান্টিবায়োটিকের তুলনায় কতটুকু শক্তিশালী হতে পারে।
৩.মানুষ এবং প্রাণীতে ব্যবহারের জন্য পর্যায়ক্রমে প্রস্তুত করা এখন কঠিন।
৪.কোন ডোজ বা ফেজগুলির পরিমাণ ব্যবহার করা উচিত তা জানা যায়নি।
৫.ফেজ থেরাপিটি কাজ করতে কত সময় নিতে পারে তা জানা যায়নি।
৬.সংক্রমণের চিকিত্সার জন্য সঠিক ফেজটি খুঁজে পাওয়া কঠিন হতে পারে।৭.কিছু ধরণের ফেজ ব্যাকটিরিয়া সংক্রমণের জন্য অন্যান্য ধরণের পাশাপাশি কাজ করে না।
আশা করি আপনারা ফাজ থেরাপি (Phage therapy) সম্পর্কে কিছুটা হলেও পরিষ্কার ধারণা পেয়েছেন। এই থেরাপি নিয়ে বিস্তর গবেষণা করলে এটি হতে পারে আমাদের অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স হতে উত্তরণের উপায়। ধনবাদ!
Reference :
1.https://phagenbio.creative-biolabs.com/discovery-of-phage-targeting-bacteria.htm?gclid=Cj0KCQiAk53-BRD0ARIsAJuNhpuklHLwePs5cNs4l7oUhWbYW-5_zGq01IyiTFwitdf55Y2_okbvogEaAn-MEALw_wcB
2.https://www.healthline.com/health/phage-therapy#legality-in-the-u-s.
3https://www.google.com/url?sa=t&source=web&rct=j&url=https://www.cdc.gov/drugresistance/biggest-threats.html&ved=2ahUKEwj30fiZu6_tAhW3_XMBHc96BRMQFjABegQIAxAE&usg=AOvVaw16rHDOypeTwLtYfHVLm9-4.
Thank You
ReplyDeleteNice startup!
ReplyDelete